Monday 7 March 2016

মারাঠি জাতীয়তাবাদ : এক নজরে

তমাল দাশগুপ্ত 



১৯৫০ এর দশক। বাঙালি তখন ট্রাম পোড়াচ্ছে, বামপন্থার বজ্রনির্ঘোষ শোনা যাচ্ছে কলকাতার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। খ্রুশ্চেভ আর বুলগানিন এর সভায় পুরো কলকাতা ভেঙে পড়ছে। আইপিটিএ ভেঙে যাচ্ছে, তবে উৎপল দত্ত অসাধারণ সব নাটক করছেন, সলিল চৌধুরির গানে বাঙালির বিপ্লবী রক্তে জোয়ার আসছে। সত্যজিত পথের পাঁচালি তৈরি করেছেন, তা সারা বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। বাঙালি সারা বিশ্বের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দিচ্ছে, এর পরের দশকগুলিতে বাঙালি স্লোগান দেবে, চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান, তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম।

বাঙালি যখন আন্তর্জাতিকতার চর্চা করছে, সেই সময় ভারতে নেহরু চাইছেন শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তুলতে, ভাষাভিত্তিক রাজ্য সেই কেন্দ্রকে দুর্বল করবে বলেই তার ধারনা। তাই বাঙালি পরিচয় থেকে বাঙালি যত দূরে সরে যাবে, এই শক্তিশালী কেন্দ্র তৈরিতে তা মদত দেবে এই আশাতেই বাঙালির আন্তর্জাতিকতা নেহরুর কিছুটা প্রশ্রয় পেয়েছিল, এমন বলা অত্যুক্তি হবে না। এই সময়ে নেহরুর পুরোনো অনুগামী বিধান রায় (গান্ধী নেহরুর যে সব পেটোয়া বাঙালি নেতারা সুভাষ বসুর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই ছিলেন বিধান রায়) এবং বিহারের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিংহ দুজনে মিলে বাংলা-বিহার সংযুক্তিকরণ প্রস্তাব পেশ করেন, তাকে সোল্লাসে সমর্থন জানান নেহরু।

বাঙালিরা দলমত নির্বিশেষে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। কমিউনিস্টরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গণমননে স্থান করে নেন। কমিউনিস্টরা অবশ্য বাঙালিদের ভূমি রক্ষার জন্য আন্দোলন করেননি, বাঙালি আত্মপরিচয়ের জন্যও নয়। তাঁরা বললেন, এই সংযুক্তিকরণ হলে বিহারের শ্রমিক কলকাতার পুঁজিপতিদের শোষণের শিকার হবে, এবং কলকাতার প্রগতিশীল ছাত্র যুব মধ্যবিত্ত সমাজ সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা বিহারের ফিউডাল ব্যবস্থার দ্বারা নিপীড়িত হবে। এ এক চমৎকার উদাহরণ যে বাংলার সাম্যবাদী আন্দোলন কি সার্থকভাবে ডুডুর সঙ্গে টামাক মিশিয়েছিল! এরা বাঙালির স্বার্থরক্ষা করলেন, কিন্তু তাকে মার্ক্সীয় পোশাকে পেশ করলেন, যাতে এই স্ট্যান্ড কোনওমতেই ঐতিহাসিক ও দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী পথ থেকে বিচ্যুত না হয়।

এই সময়ে পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে কিন্তু অন্যরকম অবস্থা। বম্বে আর মাদ্রাজ নামে যে দুটি প্রদেশ আছে, দুটিতেই আন্দোলন চলছে, আলাদা আলাদা রাজ্যের দাবীতে। সেখানে আন্তর্জাতিকতা, সর্বভারতীয়তার কোনও প্রশ্ন নেই, শ্রেণীহীন সমাজের গল্প নেই, প্রগতি ও বিপ্লব নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। তেলুগু জাতীয়তাবাদ ও মারাঠি জাতীয়তাবাদ যথাক্রমে খুঁজে বেড়াচ্ছে নিজের স্বভূমি অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র। মাদ্রাজ ভেঙে অন্ধ্রের দাবী, আর বোম্বে ভেঙে মহারাষ্ট্রের দাবী জোরালো হয়ে উঠছে।
গুজরাটিরাও আলাদা রাজ্য চাইছেন নিজেদের জন্য, তাঁরাও বম্বে প্রদেশ ভাঙার পক্ষে।

এই সময় তেলুগু জাতীয়তাবাদী পট্টি শ্রীরামালু আলাদা তেলুগুভাষী রাজ্যের দাবীতে আমরণ অনশন করে শেষপর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন, সালটা ১৯৫২। মহারাষ্ট্রও শিগগিরি উত্তাল হয়ে ওঠে। আলাদা রাজ্যের দাবীতে সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি নামের সংগঠন তৈরি হয় ১৯৫৬ সালে। তার নেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রবোধঙ্কর ঠাকরে, যাঁর আসল নাম কেশব সীতারাম ঠাকরে। প্রবোধঙ্কর ছিল এর ছদ্মনাম, এই নামেই লেখালেখি করতেন। জন্ম ১৮৮৫। ইনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে গেছেন। এঁরই পুত্র বাল ঠাকরে। এদের পদবীটি ইংরেজিতে একটু কায়দা করে থ্যাকারে লেখার চলন করেন প্রবোধঙ্কর নিজেই (ইনি ইংরেজ লেখক থ্যাকারের ভক্ত ছিলেন), যেমন বাঙালিরা কেউ কেউ দত্তকে ডাট লেখেন।

                                         প্রবোধঙ্কর ঠাকরে

প্রবোধঙ্কর নামের পেছনে একটা ইতিহাস আছে। মহারাষ্ট্রে দলিত জাগরণের আইকন মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলের জাতপাতবিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় শরিক ছিলেন কেশব (এঁর জাত ছিল চন্দ্রসেনীয় কায়স্থ প্রভু, মহারাষ্ট্রে যা ব্রাহ্মণের পরেই স্থান পায়, কিন্তু ইনি ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতপাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সবসময়) এই সময়ে উনি প্রবোধন নামে একটি পত্রিকা বের করেন, মারাঠিতে যে নামের অর্থ হল রেনেসাঁস। এই পত্রিকার থেকেই ওঁর প্রবোধঙ্কর নামটা চালু হয়ে যায়।

এদিকে সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতির সমস্ত আন্দোলন সত্ত্বেও স্টেট রিঅরগানাইজেশন কমিশন বম্বে প্রদেশ ভেঙে  আলাদা  মহারাষ্ট্র রাজ্য গঠনের বিরুদ্ধে রায় দিল, বম্বে থাকবে দ্বিভাষিক একটি রাজ্য হিসেবেই, মারাঠি ও গুজরাটির সেখানে  বিবিধের মাঝে মিলন মহান, বেশ দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে চলতে থাকবে। কিন্তু মারাঠিভাষী বিদর্ভ অঞ্চলকে বম্বে থেকে আলাদা করে একটি রাজ্য স্থাপনের পক্ষে মত দিল রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন। একে বলে কাটা ঘায়ে নুনের ছেটা।

নেহরুর পাশে তখন দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, গোলওয়ালকর সমর্থন করছেন শক্তিশালী কেন্দ্রের তত্ত্ব, মারাঠি মানুষের জন্য আলাদা রাজ্যের বিরুদ্ধে থাকলেন গোলওয়ালকর।

সিপিআই দলের প্রতিষ্ঠাতা ডাঙ্গে কিন্তু আলাদা মহারাষ্ট্র রাজ্য স্থাপনের পক্ষে আন্দোলনে যোগ দিলেন।

১৯৫৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি মহারাষ্ট্র অঞ্চলে ১৩৩ টি আসনের মধ্যে ১০১ টিতেই জেতে। কংগ্রেস কষ্টেসৃষ্টে সরকার গড়ে গুজরাট ও বিদর্ভ অঞ্চলের বিধায়কদের নিয়ে।

১৯৬০ সালে মহারাষ্ট্র রাজ্যের দাবীতে আন্দোলনরত মানুষের ওপরে গুলি চালায় মোরারজি দেশাইয়ের সরকার, ১০৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। মোরারজিকে মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছাড়তে হয়। ফ্লোরা ফাউন্টেন নামে মুম্বাইয়ের একটি জায়গায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেই জায়গার নাম আজকে হুতাত্মা চক। মারাঠি ভাষায় হুতাত্মা (শব্দটি অবশ্য সংস্কৃত) মানে শহীদ।

                             ফ্লোরা ফাউন্টেন, প্রাচীন ছবি (১৮৭৫)

এরপরেই বম্বে ভেঙে অতিদ্রুত আলাদা মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য তৈরি হয়। দিনটা পয়লা মে ১৯৬০।

এই ১৯৬০ সালেই মার্মিক বলে একটি সাপ্তাহিক বেরোতে শুরু করে, তাতে বাল ঠাকরের কার্টুন সবার মন জয় করে নেয়।

বলা দরকার, ১৯৫০ এর শুরু থেকেই বাল ঠাকরে কার্টুনিস্ট হিসেবে সবার নজর কাড়েন। ব্রিটেন থেকে এই সময় চার্চিলের ওপরে রাজনৈতিক কার্টুনের একটি সঙ্কলন বের হয়, তাতে ঠাকরের আঁকা কার্টুন ঠাঁই পেয়েছিল, তখন তিনি ফ্রি প্রেস জার্নালের স্টাফ কার্টুনিস্ট, আর কে লক্ষ্মণ তার সহকর্মী।

শিবসেনা তৈরি হয়েছিল ১৯৬৬ সালে, তবে তার আগে থেকেই মার্মিক পত্রিকাকে কেন্দ্র করে মারাঠিদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছিল।

এই সময় বাল ঠাকরে মার্মিকে “ভাচা আনি ঠাণ্ডা বাসা” (পড় এবং ঠান্ডা হয়ে বসে থাকো) নামে একটি কলাম চালু করেন, তাতে উনি দেখাতে থাকেন যে মুম্বাইতে মারাঠিরা কতটা কোনঠাসা, সমস্ত বড়লোক, সমস্ত উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারি প্রায় সবাই অ-মারাঠি, এই সব অ-মারাঠিদের নামের তালিকাও প্রকাশ করতে থাকেন ঠাকরে।

বেকার মারাঠি যুবকদের মধ্যে একটা আলোড়ন তৈরি হয়। এর পরেই সবাই মার্মিকের অফিসে ভিড় করতে থাকেন, ঠাকরেদের বাসভবনেই ছিল মার্মিকের অফিস।


   বাল ঠাকরে, মার্মিকের জন্য অঙ্কনরত



নতুন দলের নাম শিবসেনা প্রবোধঙ্করেরই দেওয়া।

এই দলটি আমাদের বিশ্বমানবিক, বিশ্বপ্রলেতারীয়, বিশ্ববাজারী বাঙালিদের মধ্যে কুখ্যাত। তার কারণগুলি কি কি? এক হল, এরা সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করে, এরা সবার ওপরে মানুষ সত্য, এরকম বলে না। দুই, এরা হিংসার উপাসক, মারদাঙ্গা করে।

প্রথমটির উত্তর পরে খুঁজব, আগে দ্বিতীয় অভিযোগটির কথা বলে রাখি। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলায় কংগ্রেস, সিপিএম ও নকশালদের হিংস্রতার সঙ্গে বাল ঠাকরের শিবসেনার তুলনা হয়? বিজন সেতুর ওপরে আনন্দমার্গীদের পুড়িয়ে মারেনি সিপিএম? আর আমাদের বামপন্থীদের আদর্শ যাঁরা, সেই লেনিন, স্তালিন ও মাও তো রাজনৈতিক হিংস্রতার রেকর্ড স্থাপন করে গেছেন। কাজেই সব ব্যাটাকে ছেড়ে দিয়ে এঁড়ে ব্যাটাকেই ধর জাতীয় ব্যাপার কেন করা হবে? শিবসেনাকেই কেন আলাদা করে হিংস্র বলা হবে, এটা একটা প্রশ্ন হিসেবে থেকে যায়।

এবার আসা যাক অন্য প্রসঙ্গে। সঙ্কীর্ণতা।

মারাঠিরা সারা ভারত জুড়ে সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিল, আমরা জানি। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে মারাঠিদের বিশাল অবদান ছিল, সেই বিদ্রোহ সফল হলে সম্ভবত গোটা ভারতে আবার মারাঠা সাম্রাজ্য স্থাপিত হত, মুসলমান বাদশা নামমাত্র শাসক হতেন, যেমনটা আগেও ছিলেন।

এই মারাঠি জাতি ব্রিটিশের কাছে পরাজয়ের পর থেকে অনবরত পিছু হটতে হটতে, কোনঠাসা হয়ে গেছিল নিজভূমিতেই। এর পেছনে ব্রিটিশের কোনও অবদান ছিল না, তা তো নয়। মারাঠি জাতীয়তাবাদ ব্রিটিশের কাছে একটা ভয়ের বস্তু অবশ্যই ছিল। যে কারণে কলকাতায় মাড়োয়াড়ি ব্যবসায়ীদের তোল্লাই দিয়েছে ব্রিটিশ, একই কারনে বোম্বেতে পার্সি, গুজরাটি, দক্ষিণ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাঙালিরা মূলত বিদ্যাচর্চা করে গেছে, ব্যবসা বড় একটা করত না। মারাঠিরা মূলত যোদ্ধা জাতি, এরাও ব্যবসা সেভাবে করত না। এই দুর্বলতার পূর্ণ সযোগ তো ব্রিটিশ নেবেই।

বাঙালিদের অবস্থা এই সময় কিরকম ছিল, শুরুতেই বলেছি। কিন্তু এই অবস্থায় মারাঠি আইডেন্টিটির একটা বহিঃপ্রকাশ অবশ্যম্ভাবী ছিল। বিশ্বমানবিকতা, উদারবাদ ইত্যাদিতে ভবি ভুলত না। উপরন্তু, একটা মজার ব্যাপার হল। শিবসেনা আর সিপিআই পরস্পরের সঙ্গে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করল, কংগ্রেসের বেশ মজা হল। শিবসেনা প্রায়ই সমাজতন্ত্রের কথা বলত, বস্তুত ঠাকরেরা একাধিকবার ডাঙ্গের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বৈভব পুরন্ডরে একটি বই লিখেছেন, বাল থ্যাকারে অ্যান্ড দ্য রাইজ অভ শিব সেনা, এই বইটিতে ঠাকরের সমাজতান্ত্রিক চাল (চালই বলা উচিত, কারন বোলচাল ছাড়া সমাজতন্ত্রের ব্যাপারে আর কোনও কর্মসূচী তার ছিল না) সম্পর্কে বেশ বিস্তারিত বর্ণনা আছে।

এখন শিবসেনা কি করল? তারা সমাজতন্ত্রের কথাও বলে, আবার মারাঠি মানুষের কথাও বলল। সিপি আই সমাজতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু মারাঠি মানুষের কথা কি ভাবে বলবে? তাহলে তো আন্তর্জাতিকতা ও শ্রেণি সংগ্রাম থেকে বিচ্যুত হতে হবে। এই জায়গায় কাজেই শিবসেনা এগিয়ে গেল, এবং মুম্বাইয়ের মারাঠি শ্রমিক, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি দাঁড়াল শিবসেনার পেছনে। মারাঠিদের মধ্যে পুঁজিপতি শ্রেণিই ছিল না, কাজেই ঠাকরে খুব সহজেই শ্রমিক মালিক অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বকে মারাঠি অ-মারাঠি দ্বন্দ্বের সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন, ফলশ্রুতিতে কামগার সেনা সহজেই সর্বত্র এ আই টি ইউ সি কে হটিয়ে দিতে লাগল।

পশ্চিমের উদ্ভাবন হল উদারবাদ, বিশ্বমানবতাবাদ এবং আন্তর্জাতিকতাবাদ। সেটা পশ্চিমের ডান, মধ্য বা বাম, যার থেকেই আসুক না কেন, তা রক্ষণশীলই হোক বা উদারপন্থী হোক বা র‍্যাডিকালই হোক, যে কোনও ভ্যারাইটির বিশ্বমানবতার মূল ফাংশন হল জাতীয়তাবোধকে নষ্ট করা, কারন জাতীয়তাবোধ সাম্রাজ্যবাদকে বিচলিত করে, ঔপনিবেশিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এজন্য জাতীয়তাবোধকে খারাপ বলা হয়, তাকে সঙ্কীর্ণ বলা হয়, তাকে গালাগাল দেওয়া হয়। যারা উদার, তারা সবাই এই সুযোগে দেখিয়ে দেন, তারা কতটা উদার, সঙ্কীর্ণতার তারা কত বিরোধী, তারা জাতীয়তাবাদের নামই সহ্য করতে পারেন না, তারা এমন উদার। আর পাঁচটা রাজনৈতিক আদর্শের তুলনায় জাতীয়তাবাদ খুব একটা আলাদা রকমের খারাপ কিছু না, সবার মত তারও অনেক খারাপ দিক আছে। কিন্তু সে যে ডিকোলোনাইজেশনের হাতিয়ার, মারাঠি জাতীয়তাবাদের উত্থান না হলে বম্বে নামই যে থেকে যেত, দেশজ মুম্বাই নামটা আর আসত না, কোনও প্রগতিশীল বিশ্ববিপ্লবী রাজনীতি যে কোনওদিন মারাঠি মানুষের কথা বলেনি, কোনওদিন বলতও না, এসব চেপে যাওয়া হয়।

মারাঠি জাতীয়তাবাদের তাই একটি নৈর্ব্যক্তিক, নির্মোহ মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে। মারাঠি মানুষের উত্থানকে পাঠ করা জরুরি। আমরা সেই কাজ করব অবশ্যই।

No comments:

Post a Comment